দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য আসে যে আমলে
![](https://cybervillain.org/wp-content/uploads/2023/08/images-13.jpeg)
আমল বা কর্ম হলো অন্তরের বিশ্বাসের প্রতিফলন। চিত্তশুদ্ধির মাধ্যমে সফলতা তথা ইহজগতে শান্তি ও পরজগতে মুক্তি লাভ সম্ভব।
পবিত্র কোরআনের শুরুতে মোমিনের জীবনে সফলতার পঞ্চ সোপান উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদের যে রিজিক দৌলত দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা বিশ্বাস করে আপনার প্রতি অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি আর যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনার পূর্বে এবং তারা পরকালের প্রতি একিন তথা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপরে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১-৫)
জান্নাতি মানুষের পরিচিতিতে আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে সপ্তসূত্র বর্ণনা করেছেন, ‘অবশ্যই সফল হয়েছে, সেসব বিশ্বাসীগণ, যারা তাদের নামাজে বিনয়ী বিনম্র, যারা অসার ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে, যারা জাকাত প্রদানে সক্রিয়, যারা নিজেদের গোপনাঙ্গ সংযত রাখে, যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা তাদের নামাজে যত্নশীল হয়, তারা হবে জান্নাতুল ফেরদৌসের অধিকারী। যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ১-১১)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন মাজিদে তাঁর প্রিয় বান্দাদের আরও পরিচয়ে ঊনবিংশ ধাপ উল্লেখ করেছেন, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের যখন অজ্ঞ লোকে মূর্খতাসুলভ সম্বোধন করে, তখনো তারা সালাম ও শান্তির বাণী বলে। তারা রাত্রি যাপন করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এবং তারা বলে—“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদিগ হতে জাহান্নামের শাস্তি বিদূরিত করুন; উহার শাস্তি তো নিশ্চিত বিনাশ! নিশ্চয় তা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসেবে নিকৃষ্ট!”
আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং তারা উভয়ের মধ্যে মধ্যপন্থায় থাকে। তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো ইলাহ বা মাবুদকে ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এসব করে, তারা শাস্তি ভোগ করবে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে তারা হীনাবস্থায় স্থিত হবে। তবে তারা নয়, যারা তওবা করে ইমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের পাপ-পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যারা তওবা করে ও সৎকর্ম করে তারা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়।
আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে স্বীয় মর্যাদার সঙ্গে তা উপেক্ষা করে চলে। আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিলে তার প্রতি অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করে না এবং যারা প্রার্থনা করে, “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তানসন্ততি দান করুন, যারা আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর হবে এবং আমাদেরকে মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন।” তাদের প্রতিদান হিসেবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষসমূহ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। তাদের সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সম্ভাষণ সহকারে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও আবাসন হিসেবে তা কতই-না উৎকৃষ্ট!’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৬৩-৭৬)
সফলতার জন্য বাহ্যিক আমলের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি অপরিহার্য। কোরআন হাকিমের বাণী, ‘সফল হলো তারা যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করল, আর ব্যর্থ হলো তারা যারা নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করল।’ (সুরা-৯১ শামস, আয়াত: ৯-১০) প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘মানবদেহে এমন একটি অঙ্গ রয়েছে, তা যদি ঠিক হয়ে যায় পুরো দেহই ঠিক থাকে; আর তা যদি কলুষিত হয়, তবে সারা দেহই নষ্ট হয়ে যায়। সাবধান! তা হলো “কলব”।’ (বুখারি, হাদিস: ৪৭, ই. ফা.)।