নিজে বাঁচতে হাসিনুরকে যেভাবে হত্যা করেন রিমন
![](https://cybervillain.org/wp-content/uploads/2023/08/d354c275d5b032eb077fcc5ce2253463-64e231462e65b.webp)
গ্রেপ্তার রিমনকে নিয়ে উদ্ধার অভিযানে যায় পুলিশ। ছবি:
দর্জি হাসিনুর রহমান হাসুর বাড়ির সামনে মাটিতে একটি তাবিজ পুঁততে গিয়েছিলেন রিমন সরকার। তাবিজ পোঁতা শেষে তাকে দেখে ফেলেন হাসু। রিমনকে ঘরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। তখন নিজে বাঁচতে ঘরে থাকা শাবল দিয়ে হাসুর মাথায় আঘাত করেন রিমন।
পরে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে বাড়ির পেছনে মাটির মেঝে কেটে চোর ঢোকার পথ তৈরি করে পালিয়ে যান। পরদিন দুপুরে তালাবদ্ধ ওই ঘর থেকে দর্জি হাসিনুর রহমান হাসুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের চৌবাড়ীয়া হারোপাড়া মহল্লার দর্জি হাসিনুর রহমান হাসু (৫৩) হত্যা মামলার প্রধান আসামি রিমন সরকারকে (২৩) গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য। গতকাল শনিবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত রিমন উপজেলার রাঙ্গালিয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের আতিকুল ইসলাম সরকারের ছেলে এবং নিহত হাসুর সদ্য তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী সাজেদা খাতুনের ছোট বোনের স্বামী।
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিমন এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (২০ আগস্ট) দুপুরে নিহত হাসুর বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে হত্যায় ব্যবহৃত একটি শাবল, একটি দা ও মাটিতে পুঁতে রাখা তাবিজ জব্দ করা হয়।
রিমন সরকারের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে ওসি রাশিদুল ইসলাম জানান, নিহত দর্জি হাসিনুর রহমান হাসু তাঁর স্ত্রী সাজেদা খাতুনকে পারিবারিক দ্বন্দ্বে কিছুদিন আগে তালাক দেন। তাদের সংসারে সন্তানও রয়েছে। তালাকের পর থেকে সাজেদা খাতুন নানাভাবে চেষ্টা করছিলেন হাসুর সংসারে ফিরে যাবার। এমন অবস্থায় তিনি এক কবিরাজের মাধ্যমে স্বামীকে বশে আনতে ও তাঁর মন জয় করতে একটি তাবিজ নিয়ে আসেন। সেই তাবিজটি তার ছোট বোনের স্বামী রিমন সরকারকে দিয়ে বলেন, হাসিনুরের বাড়ির যাতায়াতের পথে মাটিতে পুঁতে রেখে আসতে।
সেই মোতাবেক রিমন গত ১৫ আগস্ট রাতে হাসিনুরের বাড়ির সামনে মাটিতে তাবিজটি পুঁতে রাখেন। তাবিজ পোঁতা শেষে রিমনকে দেখে ফেলেন হাসিনুর। তাকে ঘরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, এত রাতে বাড়ির সামনে কেন, কি উদ্দেশ্যে।
একপর্যায়ে রিমন ঘর থেকে পালানোর চেষ্টা করলে হাসিনুর তাকে জাপটে ধরে রাখেন। পরে রিমন এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘরে থাকা লোহার শাবল দিয়ে হাসিনুরের মাথায় আঘাত করেন। এ সময় হাসিনুর ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে তার মাথায় আরও কয়েকটি আঘাত করেন রিমন। পরে শাবল, একটি দা ও হাসিনুরের মোবাইল ফোনটি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেন। সেইসাথে ঘরের পেছনে মাটির মেঝে কেটে চোর ঢোকার পথ তৈরি করে পালিয়ে যান। যাবার সময় বাড়ির সেফটিক ট্যাংকের মধ্যে শাবল ও দা ফেলে দিয়ে চলে যান।
এরপর হাসিনুরের মোবাইলের সিম খুলে ফেলে দিয়ে সেখানে নিজের সিম তুলে তার স্ত্রীর বড় বোন সাজেদা খাতুনকে কল দেন। তিনি জানান, তাবিজ মাটিতে পোঁতার কাজ হয়ে গেছে, চিন্তার কিছু নেই। নিজেকে নিরাপদ রাখতে রিমন তাকে আরও জানান, হাসিনুরের বাড়ির সামনে তিনজন মুখোশ পরা মানুষ ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন তিনি। যাতে হত্যার সন্দেহ তার দিকে না আসে। এরপর নিশ্চিন্তে নিজ বাড়িতে থেকে সব কাজ করছিলেন রিমন সরকার।
এ ঘটনায় গত ১৭ আগস্ট রাতে নিহতের ছেলে রেজাউল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওসি রাশিদুল জানান, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ এর রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা চালিয়ে যায়। একপর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হাসিনুরের ফোনে সিম তুলে রিমনের কথা বলার সূত্র ধরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জব্দ করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত শাবল ও দা। এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। সেইসাথে হাসিনুরের সাবেক স্ত্রী সাজেদা খাতুনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ আগস্ট বেলা সাড়ে তিনটার দিকে পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর শহরের হাড়োপাড়া মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে দর্জি হাসিনুর রহমান হাসুর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত হাসিনুর রহমান ওই এলাকার সোবহান আলীর ছেলে।