BangladeshEntertainmentNationalজাতীয়

দেশি সফটওয়্যারেও বাজার মাত

দেশে দিনবদলের মন্ত্র ছিল ডিজিটাল বিপ্লব। গত দেড় দশকের সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনানির্ভর এই বিপ্লব -এরই মধ্যে দেশকে অ্যানালগ থেকে পরিপূর্ণ ডিজিটালে রূপান্তর করেছে। এ সময়ে অভ্যন্তরীণ তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের এতটাই বিস্তার ঘটেছে, যার ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এখন স্মার্ট অভিযাত্রার অভিমুখে রয়েছে।

 

প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার এই অভিযাত্রায়ও অপরিহার্য হিসেবে সহায়ক সঙ্গীর ভূমিকায় থাকবে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল উদ্ভাবনী পণ্য বা সেবা সম্পর্কিত সফটওয়্যার। দেশীয় প্রযুক্তিবিদদের তৈরি করা ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির বিষয়ক এসব উদ্ভাবনী পণ্য বা সফটওয়্যার এরই মধ্যে দেশে-বিদেশে বাজার মাত করতে সমর্থ হয়েছে। যেমন ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং, ইনভেন্টরি, অ্যানিমেশন, ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট, ফটো ও ভিডিও এডিটিং, গেমিং, হিউম্যান রিসোর্স ও কমিউনিকেশন বিষয়ক বিভিন্ন সফটওয়্যার দৈনন্দিন আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলোর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর হাতের মুঠোয় এসেছে গোটা বিশ্ব। জটিল হিসাবের সমাধানে দিয়েছে পূর্ণতা এবং জীবন হয়েছে আরও সহজ।

 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটির আওতায় থাকা এমন সদস্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৬২টি। যারা বিভিন্ন উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা সম্পর্কিত সফটওয়্যার আবিষ্কার এবং বাজারজাত করছে। যেগুলো প্রতিযোগিতা করছে অসংখ্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশে সফটওয়্যার পণ্য এবং সেবার অভ্যন্তরীণ বাজার দাঁড়িয়েছে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো: ক্রমশ দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। ফলে প্রতিবছর ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে বড় হচ্ছে বাজারটি। বর্তমানে ৩ লাখ কর্মী এ খাতে কাজ করছে। নতুন করে প্রতিবছর অন্তত আরও ১০ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

 

এদিকে শুধু অভ্যন্তরীণ বাজারই নয়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে এসব সফটওয়্যার এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে নর্থ আমেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং এশিয়ার জাপানেও যাচ্ছে এসব সফটওয়্যার। সামনে রপ্তানির বাজার সম্ভাবনা জাগাচ্ছে আফ্রিকার দেশগুলোতেও।

 

বেসিস সংশ্লিষ্টরা জানান, রপ্তানি আয়ে তৈরি পোশাক খাতের বিকল্প হতে পারে আইসিটি খাত। বিগত পাঁচ বছরে এ খাতের রপ্তানি আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ এ খাত থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় অর্জন সম্ভব।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ দৈনিক কালবেলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) থেকে। কোনো খাতের ওপর একক নির্ভরতা কোনো সুসংবাদ না। নতুন খাত তৈরি করতে হবে। সেখানে যে কোনো মূল্যায়নে আসে আইসিটি খাত। তবে সেই সম্ভাবনাকে সত্যিকার অর্থেই পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার ইন্ডাস্ট্রি, একাডেমিয়া এবং সরকারকে একত্রিত হয়ে কাজ করা। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা। বিশেষ করে এ খাতের জন্য দেওয়া করপোরেট কর অব্যাহতি ২০৩১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি চলমান প্রণোদনার অর্থ ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশ উন্নীত করে তা ২০৩১ পর্যন্ত বহাল রাখা। তাহলে একদিকে যেমন এ খাত থেকে নিত্যনতুন সফটওয়্যারের হালনাগাদ ভার্সন আসবে, পাশাপাশি নতুন নতুন পণ্যও বাজারে আসবে। এতে রপ্তানিকারকরা নতুন বাজার অন্বেষণে উৎসাহ পাবে।

 

২০১৮-১৯ অর্থবছরে আইসিটি খাত থেকে রপ্তানি আয় ছিল ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সেটি ১ দশকি ২৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে এ আয় কিছুটা হোঁচট খেলেও গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয় খাতটির।

 

এ সংগঠনের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর জানান, আফ্রিকার কিছু দেশের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা হচ্ছে, তবে সেখানে প্রচুর সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি সহায়তা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি জানান, যেভাবে বাংলাদেশে আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, করোনার জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের মতো বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। সেই একই কাজ আফ্রিকায় বিভিন্ন দেশেও নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে এর জন্য দরকার সরকারের নীতি সহায়তা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button